সদানন্দময়ী কালী গানের লিরিক্স ও আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা

সদানন্দময়ী কালী গানের লিরিক্স ও আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা

আমাদের ভুলে যেতে পারেন। তাই পরিবারে যুক্ত হোন।

ভূমিকা:

“সদানন্দময়ী কালী” একটি অমর শ্যামাসঙ্গীত, যা বাংলার ভক্তি ও তান্ত্রিক ঐতিহ্যের এক গভীর প্রকাশ। বিখ্যাত সাধক ও কবি কমলাকান্ত ভট্টাচার্য রচিত এই গানটি মা কালীর সর্বশক্তিমান, আনন্দময়ী এবং সনাতনী রূপকে উদযাপন করে। মনোহর সাহার সুরে এবং পান্নালাল ভট্টাচার্য, কুমার শানু, অনুরাধা পড়োয়াল প্রমুখ শিল্পীদের কণ্ঠে এই গানটি বাঙালির হৃদয়ে এক বিশেষ স্থান অধিকার করেছে। এটি কেবল একটি গান নয়, বরং এক আধ্যাত্মিক যাত্রা, যা ভক্তকে মা কালীর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপনের পথ দেখায়। গানটির লিরিক্সে মা কালীর আদি শক্তি, সংহারক রূপ এবং ভক্তের প্রতি তাঁর মাতৃস্নেহের প্রকাশ ঘটেছে। তান্ত্রিক দর্শনের সঙ্গে ভক্তিরসের এই সমন্বয় গানটিকে এক অনন্য আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতায় রূপান্তরিত করে।

সদানন্দময়ী কালী গানের লিরিক্স ও আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা

এই গানের প্রতিটি স্তবক মা কালীর বিভিন্ন রূপ—আনন্দময়ী, শূন্যরূপা, সৃষ্ট্রী ও সংহারিণী—তুলে ধরে এবং ভক্তের আত্মসমর্পণ, অজ্ঞানতার ধ্বংস এবং মুক্তির পথের দিকনির্দেশনা দেয়। নিম্নে গানটির আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে এর গভীর তাৎপর্য তুলে ধরা হলো, যা ভক্তকে সংসারের মায়া থেকে মুক্তি ও ঐশী চৈতন্যের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার পথ দেখায়।

সদানন্দময়ী কালী লিরিক্স:

সদানন্দময়ী কালী, মহাকালের মনমোহিনী
সদানন্দময়ী কালী, মহাকালের মনমোহিনী
তুমি আপনি নাচো, আপনি গাও মা
আপনি দাও মা করতালি
সদানন্দময়ী কালী, মহাকালের মনমোহিনী
সদানন্দময়ী কালী।।

আদিভূতা সনাতনী, শূন্যরূপা শশীভালী
আদিভূতা সনাতনী, শূন্যরূপা শশীভালী
ব্রহ্মাণ্ড ছিল না যখন
ব্রহ্মাণ্ড ছিল না যখন
মুণ্ডমালা কোথায় পেলি?
সদানন্দময়ী কালী, মহাকালের মনমোহিনী
সদানন্দময়ী কালী।।

সবে মাত্র তুমি যন্ত্রী, আমরা তোমার যন্ত্রে চলি
সবে মাত্র তুমি যন্ত্রী, আমরা তোমার যন্ত্রে চলি
যেমন রাখো তেমনি থাকি মা
যেমন বলাও তেমনি বলি
সদানন্দময়ী কালী, মহাকালের মনমোহিনী
সদানন্দময়ী কালী।।

অশান্ত কমলাকান্ত, দিয়ে বলে গালাগালি
অশান্ত কমলাকান্ত, দিয়ে বলে গালাগালি
এবার সর্বনাশী ধরে অসি
ধর্মাধর্ম দুটি খেলি
সদানন্দময়ী কালী, মহাকালের মনমোহিনী
সদানন্দময়ী কালী।।

এই গানটি শ্যামাসঙ্গীতের একটি উৎকৃষ্ট নিদর্শন, যেখানে মা কালীকে আনন্দময়ী, সনাতনী ও মহাকালের মনমোহিনী রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। গানের মাধ্যমে ভক্তের আকুতি ও মায়ের প্রতি সমর্পণ প্রকাশ পায়। কমলাকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর ভক্তিমূলক কবিতায় মা কালীর সঙ্গে এক আধ্যাত্মিক ও আবেগময় সম্পর্কের চিত্র এঁকেছেন।

গানের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট:

“সদানন্দময়ী কালী” একটি শ্যামাসঙ্গীত, যা সাধক কমলাকান্ত ভট্টাচার্য রচিত। শ্যামাসঙ্গীত হলো মা কালী বা শক্তির উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কিত ভক্তিমূলক গান, যা বাংলার তান্ত্রিক ও ভক্তি ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই গানটি মা কালীর সর্বশক্তিমান, আনন্দময়ী এবং মহাকালের সঙ্গিনী রূপকে তুলে ধরে। কমলাকান্তের রচনায় মা কালীকে কখনো মাতৃরূপে, কখনো সর্বনাশিনী রূপে, আবার কখনো সৃষ্টির আদি শক্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে। এই গানে তিনি মায়ের সঙ্গে এক গভীর আধ্যাত্মিক ও আবেগময় সংযোগ স্থাপন করেছেন। গায়কেরা (যেমন পান্নালাল ভট্টাচার্য, কুমার শানু, অনুরাধা পৌডওয়াল প্রমুখ) তাদের কণ্ঠের মাধ্যমে এই ভক্তিরস ও আধ্যাত্মিকতাকে জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।

গায়ক কি বুঝাতে চেয়েছেন?

মা কালীর সর্বব্যাপী রূপের প্রকাশ:

গায়ক মা কালীকে একই সঙ্গে আনন্দময়ী, সনাতনী, সৃষ্ট্রী, ও সংহারিণী রূপে উপস্থাপন করে তাঁর সর্বশক্তিমান এবং অপরিমেয় রূপ।। মা কালী কেবল ধ্বংসকারী নন, তিনি সৃষ্টির আদি উৎস এবং জীবনের প্রতিটি দিকের নিয়ন্ত্রক। এই বোধ ভক্তের মনে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভক্তি বাড়ায়।

ভক্তির গভীরতা ও আত্মসমর্পণ:

গানটির মাধ্যমে গায়ক ভক্তির একটি গভীর রূপ তুলে ধরেছেন, যেখানে ভক্ত মায়ের কাছে সম্পূর্ণ আত্ম সমর্পণ করে। “যেমন রাখো তেমনি থাকি” বাক্যাংশটি এই আত্মসমর্পণের প্রতীক।। গায়ক বুঝাতে চেয়েছেন যে, মানুষের জীবন মায়ের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল, এবং তার কাছেই সত্যিকারের শান্তি ও মুক্তি মেলে।

আমাদের ভুলে যেতে পারেন। তাই পরিবারে যুক্ত হোন।

মানুষের দ্বন্দ্ব ও মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক:

কমলাকান্তের “অশান্ত” মন এবং “গালাগালি” মায়ের সঙ্গে ভক্তের একটি স্বাভাবিক ও মানবিক সম্পর্ককে তুলে ধরে। গায়ক বুঝাতে চেয়েছেন যে ভক্তি কেবল শ্রদ্ধা নয়, এটি প্রেম, রাগ, এবং আকুতির মিশ্রণ। মা কালী ভক্তের এই আবেগকে গ্রহণ করেন এবং তাঁকে শান্তি দেন।

দার্শনিক ও তান্ত্রিক চিন্তা:

“ব্রহ্মাণ্ড ছিল না যখন, মুণ্ডমালা কোথায় পেলি?” প্রশ্নটি তান্ত্রিক দর্শনের গভীরতাকে তুলে ধরে। গায়ক এর মাধ্যমে ভক্তকে মায়ের অতীন্দ্রিয় রূপ এবং সৃষ্টির রহস্য নিয়ে চিন্তা করতে উৎসাহিত করেন। এটি মা কালীর শূন্যরূপা ও সনাতনী রূপের প্রতি একটি দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি।

গানটি মা কালীর প্রতি ভক্তির একটি গভীর ও বহুমুখী প্রকাশ। এটি ভক্তকে মায়ের সঙ্গে একটি আধ্যাত্মক, আবেগময় এবং দার্শনিক সম্পর্ক স্থাপনে উৎসাহিত করে। গায়ক বুঝাতে চেয়েছেন যে মা কালীই জীবনের সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু, এবং তেওঁ কাছে সমর্পিত হয়েই ভক্ত শান্তি ও মুক্তি লাভ করতে পারে।

প্রথম স্তবক: “আদিভূতা সনাতনী, শূন্যরূপা শশীভালী…”

  • আধ্যাত্মিক অর্থ:
    মা কালীকে “আদিভূতা” (আদি শক্তি) ও “সনাতনী” (চিরন্তন) বলে অভিহিত করা তাঁর সৃষ্টির পূর্ববর্তী অস্তিত্বের দিকে ইঙ্গিত করে। তান্ত্রিক দর্শনে কালী হলেন শূন্য থেকে সৃষ্টির উৎপত্তি, যিনি সময় ও স্থানের ঊর্ধ্বে। “শূন্যরূপা” মায়ের নিরাকার, অপ্রকাশিত রূপকে বোঝায়, যা ব্রহ্মাণ্ডের আগে ছিল। “শশীভালী” তাঁর সৌন্দর্য ও শান্ত রূপের প্রতীক।
    প্রশ্নটি—“ব্রহ্মাণ্ড ছিল না যখন, মুণ্ডমালা কোথায় পেলি?”—একটি গভীর তান্ত্রিক ও দার্শনিক চিন্তা। মুণ্ডমালা মায়ের সংহারক রূপের প্রতীক, যা অহংকার ও অজ্ঞানতার ধ্বংসের ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু যখন ব্রহ্মাণ্ডই ছিল না, তখন এই মুণ্ডমালা কোথা থেকে এল? এটি বোঝায় যে মা কালী সময় ও সৃষ্টির সীমার বাইরে অবস্থান করেন। তিনি অজ্ঞানতার ধ্বংসকারী এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞানের দাত্রী।
  • আধ্যাত্মিক তাৎপর্য:
    এই স্তবকটি ভক্তকে মা কালীর অতীন্দ্রিয় রূপ নিয়ে ধ্যান করতে উৎসাহিত করে। এটি আমাদের শিক্ষা দেয় যে, মা কালী সৃষ্টির আদি ও অন্ত, এবং তিনিই সকল কিছুর উৎস। “মুণ্ডমালা” প্রশ্নটি ভক্তকে তাঁর সংহারক রূপের পেছনের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বুঝতে সাহায্য করে—অর্থাৎ, মা কালী অহংকার ও অজ্ঞানতার ধ্বংস করে ভক্তকে মুক্তির পথ দেখান। এটি তান্ত্রিক সাধনার মূল বিষয়: অজ্ঞানতা থেকে জ্ঞানের দিকে যাত্রা।

দ্বিতীয় স্তবক: “সবে মাত্র তুমি যন্ত্রী, আমরা তোমার যন্ত্রে চলি…”

  • আধ্যাত্মিক অর্থ:
    এই অংশে মা কালীকে “যন্ত্রী” বা সৃষ্টির নিয়ন্ত্রক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তান্ত্রিক ও বৈদান্তিক দর্শনে, জীবাত্মা সবসময় পরমাত্মার ইচ্ছার অধীন। “আমরা তোমার যন্ত্রে চলি” দিয়ে ভক্ত নিজেকে মায়ের হাতের পুতুল হিসেবে দেখছেন, যিনি তাঁর ইচ্ছায় চলেন। “যেমন রাখো তেমনি থাকি, যেমন বলাও তেমনি বলি” বাক্যটি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের প্রতীক। এটি আধ্যাত্মিক সাধনার একটি উচ্চ পর্যায়, যেখানে ভক্ত নিজের ইচ্ছা ত্যাগ করে ঐশী ইচ্ছার কাছে নিজেকে সমর্পণ করেন।
  • আধ্যাত্মিক তাৎপর্য:
    এই স্তবকটি ভক্তকে শিক্ষা দেয় যে, সত্যিকারের মুক্তি পেতে হলে নিজের অহংকার ও স্বার্থপর ইচ্ছা ত্যাগ করতে হবে। মা কালীই জীবনের সকল ঘটনার নিয়ন্ত্রক, এবং তাঁর প্রতি সম্পূর্ণ ভরসা রাখলে ভক্ত অভ্যন্তরীণ শান্তি ও মুক্তি লাভ করতে পারে। এটি তান্ত্রিক সাধনার একটি মূল নীতি: সংসারের মায়া থেকে মুক্ত হয়ে ঐশী শক্তির সঙ্গে একাত্ম হওয়া।

তৃতীয় স্তবক: “অশান্ত কমলাকান্ত, দিয়ে বলে গালাগালি…”

  • আধ্যাত্মিক অর্থ:
    এই অংশে কমলাকান্ত নিজেকে “অশান্ত” বলে বর্ণনা করেছেন, যা মানুষের সংসারিক জীবনের অশান্তি ও দ্বন্দ্বের প্রতীক। “গালাগালি” মায়ের সঙ্গে ভক্তের একটি ব্যক্তিগত ও আবেগময় সম্পর্ককে তুলে ধরে। তান্ত্রিক ভক্তির একটি বৈশিষ্ট্য হলো ঈশ্বরের সঙ্গে এই ধরনের মানবিক সম্পর্ক, যেখানে ভক্ত মাকে প্রেম, রাগ, বা অভিমানের মাধ্যমে ডাকেন। “সর্বনাশী ধরে অসি, ধর্মাধর্ম দুটি খেলি” দিয়ে মায়ের সংহারক রূপ এবং তাঁর দ্বৈততার ঊর্ধ্বে অবস্থানের কথা বলা হয়েছে। মা কালী ধর্ম-অধর্মের সীমার বাইরে, তিনি সকল দ্বন্দ্বের সমন্বয়কারী।
  • আধ্যাত্মিক তাৎপর্য:
    এই স্তবকটি আধ্যাত্মিক সাধনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে: অহংকার ও অজ্ঞানতার ধ্বংস। কমলাকান্তের “অশান্ত” মন মানুষের সংসারিক দুঃখ ও অজ্ঞানতার প্রতীক। মা কালীর সংহারক রূপ (“সর্বনাশী ধরে অসি”) এই অজ্ঞানতা ও অহংকার ধ্বংস করে ভক্তকে মুক্তির পথ দেখান। “ধর্মাধর্ম দুটি খেলি” বাক্যটি বোঝায় যে, মা কালী দ্বৈততার ঊর্ধ্বে, এবং তিনিই সকল বিপরীতের সমন্বয়কারী। এটি ভক্তকে শিক্ষা দেয় যে, সত্যিকারের আধ্যাত্মিকতা হলো দ্বৈততা থেকে মুক্ত হয়ে মায়ের সঙ্গে একাত্ম হওয়া।

গানটির সামগ্রিক আধ্যাত্মিক বার্তা:

  1. মা কালীর সর্বব্যাপী রূপ:
    গানটি মা কালীকে সৃষ্টির আদি শক্তি, সংহারক এবং আনন্দময়ী রূপে উপস্থাপন করে। তিনি শূন্য থেকে সৃষ্টির উৎস এবং সময়-স্থানের ঊর্ধ্বে অবস্থান করেন। এটি ভক্তকে মায়ের অপরিমেয় শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা ও ভক্তি জাগায় এবং তাঁর কাছে সমর্পিত হতে উৎসাহিত করে।
  2. আত্মসমর্পণ ও মুক্তি:
    গানটির মূল আধ্যাত্মিক বার্তা হলো সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ। “যেমন রাখো তেমনি থাকি” বাক্যটি বোঝায় যে, ভক্তের কাজ নিজের ইচ্ছা ত্যাগ করে মায়ের ইচ্ছার কাছে নিজেকে সমর্পণ করা। তান্ত্রিক সাধনায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যেখানে ভক্ত অহংকার ও সংসারের মায়া থেকে মুক্ত হয়ে ঐশী চৈতন্যের সঙ্গে একাত্ম হন।
  3. অজ্ঞানতার ধ্বংস:
    মা কালীর মুণ্ডমালা ও সর্বনাশী রূপ অজ্ঞানতা ও অহংকারের ধ্বংসের প্রতীক। তান্ত্রিক দর্শনে, মা কালী ভক্তের অভ্যন্তরীণ শত্রু—অজ্ঞানতা, লোভ, ক্রোধ—ধ্বংস করে তাঁকে জ্ঞানের পথে নিয়ে যান। গানটি ভক্তকে এই ধ্বংসের প্রক্রিয়াকে গ্রহণ করতে শেখায়, যা আধ্যাত্মিক মুক্তির পথ।
  4. মানবিক ও ঐশী সম্পর্ক:
    কমলাকান্তের “গালাগালি” মায়ের সঙ্গে ভক্তের একটি মানবিক ও আবেগময় সম্পর্ককে তুলে ধরে। তান্ত্রিক ভক্তিতে, ঈশ্বরকে মাতৃরূপে দেখা হয়, এবং ভক্ত মায়ের কাছে নিজের দুঃখ-কষ্ট প্রকাশ করতে পারেন। এটি আধ্যাত্মিক সাধনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যেখানে ভক্ত মায়ের সঙ্গে একটি গভীর বন্ধন তৈরি করেন।
  5. দ্বৈততার ঊর্ধ্বে উত্তরণ:
    “ধর্মাধর্ম দুটি খেলি” বাক্যটি বোঝায় যে, মা কালী সকল দ্বৈততার ঊর্ধ্বে। তিনি ভালো-মন্দ, ধর্ম-অধর্মের সীমার বাইরে অবস্থান করেন। এটি ভক্তকে শিক্ষা দেয় যে, আধ্যাত্মিক জীবনে দ্বৈততার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে সর্বজনীন চৈতন্যের সঙ্গে একাত্ম হতে হবে।

গানটির আধ্যাত্মিক প্রভাব:

“সদানন্দময়ী কালী” গানটি শুধুমাত্র একটি ভক্তিমূলক সঙ্গীত নয়, এটি একটি আধ্যাত্মিক পথের দিকনির্দেশনা। এটি ভক্তকে মা কালীর সর্বশক্তিমান রূপের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, নিজের অহংকার ত্যাগ করতে, এবং তাঁর কাছে সম্পূর্ণ সমর্পণ করতে উৎসাহিত করে। তান্ত্রিক দর্শনের মূল বিষয়—অজ্ঞানতার ধ্বংস, আত্মসমর্পণ, এবং ঐশী শক্তির সঙ্গে একাত্মতা—এই গানের মধ্যে সুন্দরভাবে প্রকাশ পেয়েছে।

গানটির সুর ও কণ্ঠের আবেগ শ্রোতার মনে এক গভীর আধ্যাত্মিক অনুভূতি জাগায়। এটি ভক্তকে মায়ের সঙ্গে একটি গভীর সম্পর্ক গড়তে এবং সংসারের মায়া থেকে মুক্ত হয়ে চিরন্তন আনন্দের সন্ধান করতে প্রেরণা দেয়।

উপসংহার:
“সদানন্দময়ী কালী” গানটি তান্ত্রিক ও ভক্তিমূলক আধ্যাত্মিকতার একটি সুন্দর সমন্বয়। এটি মা কালীর আদি, সনাতনী ও সংহারক রূপের মাধ্যমে ভক্তকে অজ্ঞানতা থেকে জ্ঞানের পথে, দ্বৈততা থেকে অদ্বৈততার দিকে, এবং সংসারের বন্ধন থেকে মুক্তির দিকে নিয়ে যায়। গানটি ভক্তকে মনে করিয়ে দেয় যে, মা কালীই জীবনের সকল দিকের নিয়ন্ত্রক, এবং তাঁর কাছে সমর্পিত হয়েই ভক্ত চিরন্তন শান্তি ও আনন্দ লাভ করতে পারে।

আমাদের ভুলে যেতে পারেন। তাই পরিবারে যুক্ত হোন।

আমাদের ভুলে যেতে পারেন। তাই পরিবারে যুক্ত হোন।

Subscribe to our Newsletter

Subscribe to our email newsletter to get the latest posts delivered right to your email.
Pure inspiration, zero spam ✨